কনক আমিরুল ইসলাম স্বদেশ ও স্বজাতিকে ভালবেসে যারা বিশ্বের সামনে চির অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন উইলিয়ম জন থম্্স্ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ‘ফোকলোর’ শব্দটির উদ্ভাবক হিসেবে সারা বিশ্বে স্মরণীয়। পাশাপাশি ফোকলোরের চর্চাকেও নিরলস চেষ্টার মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। দেশকে ভালবেসে মানবিক সম্পর্কের শিকড় ধরে যারা সমৃদ্ধ জাতি এবং শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন, তাদের ফোকলোরের দ্বারস্থ...
" />স্বদেশ ও স্বজাতিকে ভালবেসে যারা বিশ্বের সামনে চির অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন উইলিয়ম জন থম্্স্ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ‘ফোকলোর’ শব্দটির উদ্ভাবক হিসেবে সারা বিশ্বে স্মরণীয়। পাশাপাশি ফোকলোরের চর্চাকেও নিরলস চেষ্টার মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। দেশকে ভালবেসে মানবিক সম্পর্কের শিকড় ধরে যারা সমৃদ্ধ জাতি এবং শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন, তাদের ফোকলোরের দ্বারস্থ হতেই হবে। ফোকলোর সংহত সমাজের সামগ্রিক সৃষ্টি, ব্যক্তি বিশেষের একক সৃষ্টি নয়।
স্টিথ টমসন সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোকলোরবিদগণ ফোকলোরকে জ্ঞাতিবিদ্যা সমূহের সীমান্তবর্তী ক্ষেত্র (Border field) বলে মনে করেন। আধুনিক ফোকলোর চর্চার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ হলো: কনটেক্সট (Context), পারফরমেন্স (Performance), পাঠভেদ (Variant) এবং ফাংশন (Function)। ১৯৬০ এর দশকে ফোকলোর বিজ্ঞানের নতুন ভিত্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে লিটারেরি ফোকলোরিস্টদের টেক্সটভিত্তিক গবেষণা অনেকটা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে বিধায় বিজ্ঞান ভিত্তিক ফোকলোর চর্চা ব্যাপকতা লাভ করে। তখন থেকেই নৃবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, ভাষাতত্তে¡র নানা তর্ক তদন্তের ধারা ও পদ্ধতি ফোকলোর বিজ্ঞানীরা গ্রহণ করতে থাকেন। ফলে ফোকলোর হয়ে ওঠে বহুবিদ্যা নির্ভর নতুন একটি শাস্ত্র বহুমুখী বিদ্যা শৃঙ্খলা (A multi-disciplinary science)।
যে বিদ্যাকে এ যাবত কাল কুলিন বিদ্যাশাস্ত্র তেমন পাত্তা দেননি, সেই বিদ্যাই নিজেকে হাজির করতে সক্ষম হয় স্মার্টভঙ্গি ও আধুনিক শৈলীসমৃদ্ধ এক ভাবগম্ভীর ও শাঁসালো বিদ্যা শাখায়। বহু বিদ্যা নির্ভর (Multi-disciplinary approach) এ্যাপ্রোচ দেবার ফলে ফোকলোর শাস্ত্র (Folkloristics) আধুনিক, স্মার্ট, পরিবর্তনশীল ও বহুমাত্রিক হয়ে উঠেছে। তদুপরি ফোকলোরকে ঐতিহ্যভিত্তিক বা পুরাকীর্তি সদৃশ অনড় উপাদান হিসেবেও আর ভাবার অবকাশ নেই। গত শতকের সাতের দশকে ফোকলোরের বৃত্ত ভাঙ্গার কাল। আর্কাইভস-এ আবদ্ধ উপাদান ছেড়ে গতিশীল সমাজে ফোকলোরের প্রবাহ অনুসন্ধানেরই প্রতিধ্বনিত রূপের প্রকাশ বর্তমান বিজ্ঞানভিত্তিক ফোকলোর চর্চায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফোকলোরের ফাংশন, গঠন, জেনার, স্টাইল নিয়ে কত কত কথা উঠে এসেছে। ফোকলোরের আন্তর্জাতিকতা এবং বহুবিদ্যানির্ভর চর্চা এর সাবেক কাঠামো ও দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে। ফোকলোর শব্দটি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে যার কল্যাণে, তিনি উইলিয়ম জন থম্স্ (William John Thoms). Folklore শব্দটি তিনিই সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ১৮৪৬ সালে থম্স্ ইংল্যাণ্ডের দি এ্যাথেনিয়াম পত্রিকায় লিখিত একটি পত্রে শব্দটি প্রথম উলেখ করেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্থান অধিকারী এই শব্দটির বর্তমান এবং পূর্ববর্তী চেহারা এক নয়। পুর্বে শব্দটি Folk এবং Lore দুটো অর্থবহ শব্দের সমন্বয়ে (Folk-lore) আকারে লেখা হতো। ১৮৭৮ সালে থম্স্, এডওয়ার্ডস্ লী, আর এস বোস্টন এবং স্যার লরেন্স গোম একত্রে ইংল্যাণ্ডে ‘ফোকলোর সোসাইটি’ (Folklore Society) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সোসাইটি (Society) যে মুখপত্রটি প্রকাশ করে তার নাম ছিল ‘ফোকলোর রেকর্ড’ (Folklore Record). পরবর্তীকালে পত্রিকাটি ‘ফোক-লোর’ (Folk-lore) নামেই পরিচিতি লাভ করে। আরও কিছুকাল পরে মাঝখানের হাইফেনটি তুলে দিয়ে দুটো শব্দের পরিবর্তে একটি সমাসবদ্ধ শব্দ ‘ফোকলোর’ (Folklore) লেখা হয়। সেই থেকেই শব্দটি বর্তমান চেহারা পায়।
উইলিয়ম থম্স্ (William Thoms) ১৮০৩ সালে ইংল্যাণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সরকারী কোষাগারের একজন সাধারণ কেরানী। তিনি নিজেও পিতার পেশা গ্রহণ করেন এবং স্বাধীন ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। চেলসিয়া হাসপাতালের সেক্রেটারীর দপ্তরে তিনি উক্ত পদে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ইতোমধ্যে ‘অ্যান্টিকোয়ারিয়ান সোসাইটি’(Antiquirian Society) তে অংশগ্রহণ করে সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে সকলের নজর কাড়তেও সক্ষম হন। ঐতিহ্যপ্রেমী থম্স্ ১৮৩৮ সালে সোসাইটির সম্মানিত ফেলো নির্বাচিত হন। একই সময়ে তিনি ক্যামডেন সোসাইটিতে সচিবের পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এছাড়াও তিনি পার্সি সোসাইটিতে সদস্যপদ লাভ করেন। উভয় সোসাইটিতেই তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মাঝখানে তিনি হাউস অব লর্ডস এর প্রিন্টিং প্রেসে কেরানী পদে যোগদান করেন। সেখানে তিনি স্বপদে ১৮৬৩ সাল পর্যন্ত কাজ করার পর উপ-গ্রন্থাগারিক পদে উন্নীত হয়েছিলেন। উইলিয়ম জন থম্স্ (William John Thoms) এর প্রিয় বিষয় ছিল ভাষাতত্ত¡। প্রাচীন ভাষাতত্ত্ব চর্চার মধ্যে দিয়েই তিনি ফোকলোরের সীমাহীন সম্পদের সন্ধান পান এবং রস আস্বাদন করার সুযোগও লাভ করেন। ভাষাতত্তে¡র গবেষণায় তিনি প্রথম এবং সমসাময়িকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ছিলেন। তাঁর প্রথমদিকের প্রকাশনার দিকে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায় তিনি কী পরিমাণ দেশপ্রেমিক, ঐতিহ্য সচেতন এবং ভাষাতত্ত¡ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। বিশেষ করে তাঁর ‘আ কালেকশন অব আরলি প্রোজ রোমান্স’(A collection of early prose Romance, 1828) উলেখযোগ্য একটি সংগ্রহ এবং সংকলন গ্রন্থ।
তাঁর এই সংগ্রহ ‘ডচস্’ (Douce’s) এর গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করে। উক্ত সংকলনে লোকমুখে প্রচলিত বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং রোমাণ্টিক আখ্যান স্থান লাভ করে, যা সেদেশের জাতীয় সম্পদ ও গর্বের বিষয় ছিল। মধ্যযুগের কিছু বর্ণনামূলক দীর্ঘ চরিত্র বিশেষ করে ‘ডক্টর ফস্টাস’ (Doctor faustus), ‘রবার্ট দ্য ডেভিল’ (Robert the Devyl), ফ্রায়ার রাশ (Friar Rush), ‘ফ্রায়ার বেকন’ (Friar Bacon) প্রভৃতিকে থম্স্ চিহ্নিত করেন; যা প্রকৃতক্ষে ঐতিহ্য থেকে সৃষ্ট, কাব্যগুণ সমৃদ্ধ এবং শিল্পমান অক্ষুন্ন রেখেই মুখে মুখে বংশানুক্রমিক হস্তান্তরিত হয়ে আসছিল। সতর এবং আঠার শতকে বিবিধ জনপ্রিয় প্রকাশনা শুরু হলে ফোকলোরের বিচিত্র উপাদান বিশেষ করে জাদু, অলৌকিক ঘটনা, বীর কাহিনি, দুঃসাহসিক মৃত্যু এবং ভ্রমণ কাহিনি যে সকল সমাজে চলমান, সুস্পষ্ট জীবনঘনিষ্ট তাঁদের সকল সৃষ্টিশীল উপাদানসমূহ নিয়ে বর্ণনামূলক গবেষণা গ্রন্থ ও প্রবন্ধ ছাপা হতে থাকে। থম্স্ ১৮৩৪ সালে ‘লেইজ অ্যান্ড লিজেন্ডজ অব জার্মানি’ (Lays and legends oF Germany) নামক গ্রন্থে বিভিন্ন জাতির ঐতিহ্যভিত্তিক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক বিষয়াদির ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। প্রকাশনার যৌক্তিকতা এবং গুরুত্ব উপলব্ধির সুবিধার্থে স্যার ওয়াল্টার জন ম্যালকম (Sir walter john Malcom) এর উদ্ধৃতিও তুলে ধরেন, ─‘সেসব মানুষ সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করা হয়, যারা তাদের জনপ্রিয় কাহিনি অথবা স্থানীয় বিশ্বাস-সংস্কার বোধসমূহ খাটো করে দেখবেনা’। এই উক্তিটি প্রধান শিরোনামেই প্রকাশ করেন। থম্স্ তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় বয়স্ক মহিলাদের পৌরাণিক কাহিনি, আগুন সম্পর্কিত কাহিনি, জাতীয় কাহিনি এবং পৌরাণিক জ্ঞান ও তাদের দার্শনিক বুদ্ধিমত্তার প্রতিফলন হিসেবে তুলে ধরেন। বারো বছর পরে তিনি সংক্ষিপ্ত, জোড়ালো, পরামর্শমূলক বিষয়গুলো এতে যুক্ত করেন এবং গুরুত্ত¡পূর্ণ প্রতিশব্দও চিহ্নিত করেন, যা তিনি গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। ভার্জিলের কিংবদন্তী ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’ (Arabian nights), ফ্রান্সের ‘ফ্যাবিলকস্ (Fabiliaux), রুশ ‘রবিন গুডফেলো’ (Robin goodfellow) স্কটিশ ‘রেড ক্যাপ’ (Red cap) এবং নরওয়ের ‘নিসে’ (Nisse), প্রভৃতি চরিত্র ও বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি ‘গ্রিম’ (Grimm) ভাইদের দুটি গার্হস্থ্য লোককথার তুলনামূলক আলোচনাও করেন। তাঁর মতে ‘ফ্যায়ার বেকন’ (Friar Bacon) চরিত্র জনপ্রিয় ও লোকায়ত বীর প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্র।
মধ্যযুগের শুরুর দিকে গল্পগুলো ছিল সাধারণত বিনোদনধর্মী। থম্স্ এসব গল্পগুলোকে একটি আলাদা শিরোনামে পরিচিত করার পরিকল্পনা নেন। তিনি এই শিরোনামের নাম দেন ‘লেইজ অ্যান্ড লিজেন্ডজ অব ভেরিয়াস নেশন’ (Lays and Legends of various Nation) ─এই সমস্ত দুর্লভ কাজের সংকলন ১৮৩৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনে জার্মান, ফ্রান্স, স্পেন এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে সমীক্ষা করা হয়। ভূমিকাতে সিরিজের পটভূমি সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হয়। সংকলিত জনপ্রিয় গল্পের গবেষণা এবং দার্শনিক চিন্তাযুক্ত পৌরাণিক কাহিনী সমসাময়িক গবেষণায় গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ‘স্যার ওয়াল্টার স্কট’ (Sir walter scott) তারঁ ‘দ্য লেডি অব লেক’ (The lady of lake─1810) গ্রন্থে উলেখ করেন, “বৃহত্তর স্বার্থে জনপ্রিয় গল্পের উৎস সংকলন করা দরকার─এই উৎস কালে কালে এক সময় থেকে অন্য সময়ে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে হস্তান্তরিত হয় এবং তা এক সময়ে পৌরাণিক কাহিনীতে রূপান্তরিত হওয়ার পরের শতাব্দীতে রোমাঞ্চকর কাহিনীতে পরিণত হয়।” এই পরিণতির ভেতরে ফোকলোরের অন্তর্নিহিত শক্তির অসম্ভব প্রকাশ দেখতে পাই। এই সময় থম্স্ আক্ষেপ করে বলেন, তারঁ বন্ধু ডচস এর যোগ্যতা থাকা সত্বেও স্যার ওয়াল্টার স্কট (Sir walter scott) এর আহবানে সাড়া দেননি। কিন্তু ‘স্যার ফ্রান্সিস পেলগ্রেভ’ (Sir Francis palgrave) তারঁ দু’টি প্রবন্ধে পুরাতনী শিশুতোষ সাহিত্য ও মধ্যযুগের জনপ্রিয় লোকাচার বিষয়ে লেখেন ‘থম্স্ কাইটলি’ (Thoms keightley) সম্পাদিত ফেয়ারি মিথোলজি অ্যান্ড টেলস অ্যান্ড পপুলার ফিকশনস্’ (Fairy Mythology and tales and popular fictions) নামক গ্রন্থে। থম্স্ শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হওয়ায় ১৮৩৪ সালে স্কট এর ইচ্ছে পূরণ করেন নানা লেখালেখি এবং গুরুত্বপূর্ন অনুবাদও মন্তব্যের মধ্য দিয়ে।
পরবর্তীতে থম্স্ নির্বাচিত জাতীয় কাহিনীর তালিকা বৃদ্ধি করেন। তিনি স্বীকার করেন যে অল্প পরিমাণে জনপ্রিয় ঐতিহ্য সব সময়ই পাওয়া যায়। কিন্তু ফ্রান্স ও বৃটেনের লোকেরা ‘অ্যান্টিকোয়ারি’ (Antiquiary) সম্পর্কে খারাপ ধারণা ও অবহেলা পোষণ করায় তা হারিয়ে যাচ্ছিল। আসলে থম্স্ তাঁর ‘লেপস অ্যান্ড লিজেন্ড অব জার্মানি’ (Laps and Legend of Germany) গ্রন্থের মধ্য দিয়েই প্রকাশকদের নজরে আসেন। থম্স্ এর গ্রন্থ সম্পর্কে ‘জর্জ কাও’ (George cowie) মন্তব্য করেন “এই কালজয়ী গ্রন্ধথটি কল্পনার দৃষ্টিকে প্রসারিত করে দেয়। এটা সম্পাদনার মাধ্যমে জাতীয় এবং তুলনামূলক মৌখিক সাহিত্য বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায়।” এরপরে ১৮৪৪ সালে Thoms পার্সি সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘দ্য হিস্ট্রি রেনার্ড দ্য ফক্স্’ (The History Reynard the fox) নামক গ্রন্থের ভূমিকাতে জার্মানির জেকব গ্রীমকে অভিবাদন জানান। থম্স্ এ্যাথেনিয়াম নামক ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক মি. অ্যামব্র“জ মর্টন (Mr. Ambrose morton) সাহেব কে ২২ আগস্ট ১৮৪৬ এক লিখিত পত্রে Folk-lore শব্দটির সর্বপ্রথম প্রয়োগ দেখান।
এ্যাথেনিয়াম পত্রিকাটি সাপ্তাহিকী হিসেবে কলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে লেখা প্রকাশের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি ও পাঠকপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়। থম্স্ ‘পপুলার অ্যান্টি কুইটিস’ (Popular Antiquities) ও ‘পপুলার লিটারেচার (Popular literature) এর সমার্থক হিসেবে ‘ফোক-লোর’ (Folk-lore) শব্দটির সার্থক প্রয়োগ করেন। সেই সাথে জার্মানির গ্রীম ভাইদ্বয়কে অনুরোধ করেন ফোকলোরের পৌরাণিক যুক্তিগুলোর বিশ্লেষণ সম্পর্কে জোড়ালো ভূমিকা রাখার জন্য। পত্রটি প্রকাশের এক বছর পরে এ্যাথেনিয়াম পত্রিকার ৪ সেপ্টেম্বর ১৮৪৭ সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ লেখেন, যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য ফোকলোর অব শেক্সপীয়র’ (The Folk-lore of Shakespeare). এই প্রবন্ধে শেক্সপীয়রের নাটকে যেসকল লোকউপাদান বিশেষ করে লোকাচার এবং লোকসাহিত্যের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে; তার মোটামুটি একটি বিবরণধর্মী আলোচনা করা হয়। শেক্সপীয়রের ন্যায় একজন মহান নাট্যকারের সাহিত্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফোকলোর বলতে কোন কোন উপাদানসমূহকে নির্দেশ করে, উলেখিত প্রবন্ধে সেই বিষয়ের অবতারণা করা হয়। থম্স্ পরবর্তীকালে ফোকলোরকে বিশেষ বিদ্যাশৃঙ্খলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও গবেষণার দ্বার উম্মুক্ত করার কৌশল হিসেবে প্রাচীন ঐতিহ্য ও পৌরাণিক কাহিনির বিশ্লেষণধর্মী আলোচনায় নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন।
তিনি চতুর্থবারে লিখিত এক পত্রে পাঠকের উদ্দেশ্যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে জোড়াল যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, ফোকলোর নিজ দেশের জনজীবনের ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যেই রয়েছে। একই সাথে তিনি পাঠকদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে উলেখ করেন, যেন এর চেয়েও একটি সার্থক নাম পাওয়া যায়। ঠিক একই সময়ে ফোকলোর নামে একটি বিভাগ খোলার পাশাপাশি বিষয়টির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এবং বিশ্লেষণধর্মী চর্চার প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনে চাঁদা সংগ্রহ করেন। এর পর থেকেই পত্রিকাটি প্রাচীন ও হারানো দিনের আচার ব্যবহার, পোষাক-পরিচ্ছদ, মণনশীল সৃষ্টি, মৌখিক সাহিত্যের উপকরণ, অনুভূতি, বাকভঙ্গি, ভাষাবৈশিষ্ট্য, অঙ্গভঙ্গি প্রভৃতি বিষয়ক ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ছাপানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করে। সে সময় থেকেই ফোকলোরের নানা উপাদান উপকরণ নিয়ে প্রবন্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন মূল্যবান এবং গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ পেতে থাকে।
থম্স্ ১৮৪৮ সালে এ্যাথেনিয়াম পত্রিকাটির মালিকানা গ্রহণ করে প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সহযোগী হিসেবে নেন রেভারেন্ড স্যামুয়েলকে। বিবিধ প্রত্নতাত্ত্বক বিষয়াদি সংগ্রহ ও আলোচনার মাধ্যমে ফোকলোর চর্চাকে জনপ্রিয় করে একটি বহুমুখী বিদ্যাশৃঙ্খলা হিসেবে গবেষণামনষ্ক দেশপ্রেমিক প্রজন্ম সৃষ্টিতে সহযোগিতা করতে স্যামুয়েলকে উদ্বুদ্ধ করেন। এ পর্যায়ে প্রথম সংখ্যাতে ধর্মভিত্তিক একটি লোককথা প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের জনজীবনে বিধৃত আচার-ব্যবহার, বিশ্বাস-সংস্কার, ছড়া, প্রবাদ, গীতিকা ইত্যাদি প্রকাশ করতে থাকেন। থম্স্ ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৭২ সাল পর্যন্ত সম্পাদক থাকাকালীন ফোকলোরের উপাদান ভিত্তিক হাজারো প্রবন্ধ প্রকাশ করে বোদ্ধা মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন।
ফোকলোর সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য থম্স্ ১ ডিসেম্বর ১৮৭৭ এক ঐতিহাসিক সভার আহ্বান করেন। স্যার এডওয়ার্ডস লী, আর এস বোস্টন, লরেন্স গোম প্রমুখের উপস্থিতিতে ঐ সভায় ফোকলোর সোসাইটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ৩০ জানুয়ারি ১৮৭৮ থম্স্ এর সভাপতিত্বে পরিষদ প্রথম সভা ডেকে ফোকলোর সোসাইটি গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সোসাইটির প্রথম পরিচালক নির্বাচিত হন উইলিয়ম থম্স্ এবং জর্জ লরেন্স গোম সর্বসম্মতিক্রমে সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে নবগঠিত ফোকলোর সোসাইটির কাজ শুরু করেন। পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় তখন থেকে ১৮৮৫ সালে মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত থম্স্ স্বদেশ ও স্বসমাজকে ভালবেসে ফোকলোর চর্চায় অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি এর গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মাত্রা দান করেন। সে কারণেই ফোকলোর শব্দটি আজ আমাদের এবং ফোকলোর চর্চার পথিকৃৎ হিসেবে সারা বিশ্বে তিনি চির স্মরণীয় হয়ে আছেন।
১. শামসুজ্জামান খান। আধুনিক ফোকলোর চিন্তা। ঢাকা: অনুপম প্রকাশনী, ২০০১।
২. মযহারুল ইসলাম। ফোকলোর পরিচিতি ও পঠন-পাঠন। ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৩ ।
৩. আশুতোষ ভট্টাচার্য। বাংলার লোক-সাহিত্য। কলকাতা: ক্যালকাটা বুক হাউস, ১৯৬২।
৪. Richard M. Dorson, The British Folklorists (Chicago: The University Of Chicago Press, U S A, 1968)
৫. Richard M. Dorson, American Folklore (Chicago: The University Of Chicago Press, U S A, 1966)
many many thanks to you,sir for writing this.
hope this work of you will help the nation to know about folklore.