কনক আমিরুল ইসলাম


বাংলা কাব্যজগতে অনুপম হীরা মণ্ডলের আবির্ভাব গত শতকের শেষ দশকের শেষ প্রান্তে। বিকাশ এবং পথচলা বর্তমান শতাব্দীর শূন্য দশকে। শূন্য দশক বাংলা কাব্যসাহিত্য ইতিহাসই নয়, বিশ্ব্ ইতিহাসেরও নতুন বাঁক ফেরার কাল। অনুপম হীরা মণ্ডলের কবিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে এই কালপর্ব আলোচনা করা অতীব জরুরি। আমাদের চোখের সামনে ১৯৯০ সালের সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর উপসাগরীয় যুদ্ধ বা আফগানিস্তান-ইরাক যুদ্ধ প্রভূত কারণে নতুন শতাব্দীতে মানুষের মূল্যবোধ যেমন ভেঙে গেছে, মৌলবাদী শক্তি হঠাৎ জেগে ওঠা ঘুমন্ত দৈত্যের মতো ছড়িয়ে পড়েছে; তেমনি মানবতাবিরোধী শক্তি ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনও নতুন গতি পেয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন, নয়াউপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের প্রেরণা হয়ে কবিতার ভাষায় সংশয়ের, ক্লান্তির, বিদ্রোহের, প্রতিবাদের রূপ নিয়ে হাজির হলো ঐতিহ্য ও আধুনিকতার অবয়বে। প্রেমিক ও পলাতকা প্রেমের, দ্রোহের, উত্তরাধুনিকতার এক কণ্টকিত কাচের কুসুমের মতো; যা শীতের সকালে অত্যুজ্জ্বল কিন্তু শিউলি ফুলের মতো সূর্যালোক বাড়ার সাথে সাথে ম্রিয়িমান নয়। জীবন ও জগতের অভিজ্ঞতাপুঞ্জ শিল্পের মেলবন্ধনের চিহ্নায়ক প্রেমিক ও পলাতকা পাঠকের ইচ্ছাপূরক বা মনোরঞ্জক মাত্র নয়। ঐতিহ্যের সাথে গভীর জীবনবোধের আধুনিক রূপায়ণের কারণেই কবিতা এবং কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম নির্বাচনেও  কবির সময় তথা কালপর্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তৎকালীন মাকিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র সদর্ভে বলেছিলেন, ‘এক নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে’। বিপর্যস্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ভৌগোলিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ায় যে পালাবদল ঘটলো, তা দ্বিমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক একমেরুবিশিষ্ট বিশ্বব্যবস্থার যে ঘোষণা জর্জ বুশ সেদিন দিলেন তার স্থান, কাল এবং পাত্র ছিল প্রাসঙ্গিক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী চার দশক পেরিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক ক্ষমতার ভারসাম্য ভেঙে একক তথা অদ্বিতীয় শক্তি হিসেবে ওয়াশিংটনকে মানতে হবে, কোনো বিকল্প নেই এমন সদম্ভ ইংগিত ছিল সেদিনের সিনিয়র বুশের এই ঘোষণা। পরবর্তী সময়ে একে একে দেখা দিল আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া প্রভৃতি যুদ্ধ এবং সবশেষে ইউরোপকেন্দ্রিক বিশ্ব অভিবাসী সংকট, পশ্চিমা অর্থনৈতিক ধস এবং আলকায়েদা থেকে তালিবান, আইএসআইএস প্রভৃতি। বাগদাদ দিয়ে মার্কিনীরা জানিয়ে দিল নতুন বিশ্বব্যবস্থা সত্য সত্যই বাস্তব রূপ নিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত ওইরূপ যথেচ্ছা বোমাবর্ষণ কখনোই সম্ভবপর ছিলনা। নতুন বিশ্বব্যবস্থায় বিশ্ববাসী দেখলো রাষ্ট্রীয়-রাজনৈতক-সামরিক শক্তির স্বরূপ। কিন্তু নতুন বিশ্বব্যবস্থার এই পরিহাস মিডিয়ার কল্যাণেও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। একমেরু বিশ্বের স্বাদ বেশিদিন উপভোগ করাটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হজম হয়নি। বিশ্ববাস্তবতায় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলেও ঘুমন্ত বাঘ্রের মতো জেগে উঠেছে পুতিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী রাশিয়া। সমাজতান্ত্রিক হস্তী যুগের পরে জাতীয়তাবাদী রাশিয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে মূর্তিমান বাঘ্র। বসে নেই চীন অথবা ভারত। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেদিনের সেই ঘোষণা এখন আর ততবেশি কার্যকর নয়। কৌশল বদলে ওয়াশিংটন এখন ভাগবাটোয়ারা আর অর্থনৈতিক আগ্রাসন অব্যাহত রাখলেও দুনিয়াবাসী ইতোমধ্যে বুঝে গেছেন বিশ্বায়নের ধুয়ো তোলা ওসামা বা তালিবানের স্রোষ্টা ওয়াশিংটন, আইএসআইএস এর স্রোষ্টাও ওয়াশিংটন। ইরাক তথা বাগদাদের স্বৈরশাসক সাদ্দামের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মারণাস্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল তা ছিল মার্কিন একমেরুকেন্দ্রিক মিডিয়া বিশ্বের তৈরি। সাদ্দাম বা গাদ্দাফির মতো স্বৈরশাসকের চেয়ে পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকদের কী চরম দুর্দশা! তা স্যাটেলাইট দুনিয়ার মানুষ স্বচক্ষে দেখেছে। অনুপম হীরা ম-ল বিশ্বব্যবস্থার মোড় বদলের এই বাঁকগুলোর অল্পবিস্তর স্বাক্ষী বলেই কালের দাবিতে রাজপথে সিনিয়র বুশবিরোধী সমাবেশে দাঁড়িয়েছে আফগান অথবা ইরাক যুদ্ধ সমকালীন আন্দোলন সংগ্রামে। আফগানিস্তানে ওসামা বিন ইউএস’র তালিবানদের বোমার আঘাতে যখন সহস্র বছরের পুরাতন বুদ্ধমূর্তিগুলো টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়লো, তখন আমরা পেলাম অনুপম হীরা ম-লের কাব্যগ্রন্থ গান্ধারীর দেশে, ২০১৩। সমকালীন বাংলাদেশের একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে যখন সমগ্র দেশ উত্তাল, ঘরছাড়া তরুণ প্রজন্ম; তখন অনুপম হীরা ম-লকে দেখি গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম নিয়েও পুস্তিকা প্রকাশনার মাধ্যমে এর ভবিতব্য এবং তরুণ প্রজন্মের আবেগকে তুলে ধরতে যুক্তি মুক্তি এবং সংগ্রামের বাস্তবতায়। কাজেই ইতিহাস এবং সমকালের মাঝে অনুপম হীরা ম-লের বরাবরই বসবাস সচেতন এবং সরাসরি। তার আগে ও পরে আমরা পেলাম গবেষণা গ্রন্থ বাংলার ভাবান্দোলন ও মতুয়া ধর্ম, ২০০৭; বাংলাদেশের লোকধর্ম: দর্শন ও সমাজতত্ত¡, ২০০৯; লোকক্রীড়ার অন্তর্পাঠ, ২০১১; ফকির লালন সাঁই: ভাব-সাধনা, ২০১২; ফোকলোর অনুষঙ্গ, ২০১৫ প্রভৃতি।

বঙ্গভাষা থেকে প্রকাশিত প্রেমিক ও পলাতকা কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে অনুপম হীরা ম-লের ৫৬ টি কবিতা। কবিতার শিরোনামগুলি যদি একনজরে দেখে নিই, তাহলে সমকাল, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক মেলবন্ধন খুঁজে পাব। কবিতার শিরোনামসমূহ: দেহবাদীর বয়ান, পৌর মানচিত্র, অভিসারের অপেক্ষা, ব্রাত্য সঙ্গীত, প্রেমিকের পদধ্বনি, অলস রোদের সাথে, বিরহী পাখির মতো, তোমাকে আমি দাঁড়াতে বলেছিলাম, শ্যামসুন্দরীর মায়া, আশ্রয়, পুরুষালী, বিরহী বাতাসের সাধ, চার্বাক কবি, জবাবহীন প্রশ্নমালা, অদেখা জগতের স্বপ্ন, নতুন এক জীবনের গল্প, কেবল দাঁড়িয়ে তুমি, হয়তো কাইয়ুমের মতো, নতুন কোনো এক চিহ্নরেখা, পোড়ামাটির আল্পনা, ফুল ফুটিয়ে কী হবে, যেখানে আমার মায়েদের মুখচ্ছবি নেই, নীরবে বসে আছি, দিন ফুরিয়ে যায়, গোপন সাধনার নেশায়, তুমি আমাদের নও, এই আমাদের ভূমি, কবিতার সূতিকাগার,  নিজের কাছে একটু ফুরসৎ চাই, দুঃখিনী জন্মভূমি, পদচিহ্নটুকু রাখো, মৃত্যুর মতো কালো, গয়ালের হাড়, মায়াভরা রঙ, নাগরিক জীবনযন্ত্রণা, ভাঙা আসরের মরমী গান, পরম্পরা তারা যেন, কাইয়ুমের অব্যক্ত কথায়, মতিহারে ফোটে জারুল, বেহুলার জীবন, দূর হ’ ইচ্ছে যতদূর, তোমার মুখ দেখলে মনে হয়, কতোদূর এলাম আমি, এই সে মাটির রেখা, মাটির মায়ায় এসেছি, এইতো সাধুদের পায়ের ধুলো,  এসো মিলি আমরা পরম্পরা, আমাদের মুখচ্ছবি,  ঘুমাতে যাবো কখন?, স্মৃতি, এবার ফেরার পালা, হাতের পরে হাত রেখেছি, স্বতন্তরা, কোনো এক দ্বিধায়, বীজ বপন এবং ঘুম আসে না।

প্রেমিক ও পলাতকা কাব্যগ্রন্থে আধুনিকতার দৃষ্টি দিয়ে বাংলার অতীত ঐতিহ্যকে চেতনায় ঋদ্ধ করে টেনে আনা হয়েছে বর্তমানের পাটাতনে। ইতিহাসের এই ক্রান্তিকালের ছায়া দারুণভাবে ফুটে উঠেছে কবিতার চিত্রকল্পে। স্পষ্টতই অনুপম হীরা মÐল ইতিহাস সচেতন কবি। কাজেই স্বদেশ, স্বকাল ও জীবনের প্রতিচ্ছবি যেমন তার কবিতায় ধরা দেয়; তেমনি চৈতন্য থেকে লালন বহমান কালের সীমায় ফিরে ফিরে আসে চর্যার যুগ হয়ে সমকালীন জীবনের অসাম্য মানবতাবাদী চেতনার আবাহনে। যখন উচ্চারিত হয়:

‘চরম নাস্তিক সাঁইজী লালন/
সাম্য-মৈত্রীর আহ্বানে আখড়া গড়ে।/
সান্ধ্য ভাষায় করে আলাপন/
পতঙ্গের মতো আমরা যাই উড়ে।’

অথবা,

‘কুলত্যাগী হলাম চৈতন্যসহচর/
বিশাখা অথবা শাঠিকন্যার সেবক/
মাটি ছুঁয়ে হয়ে যাই কেতাবি সবক।’ (দেহবাদীর বয়ান)

কবিতার নিখাদ স্বাদে ইতিহাসের অলিন্দ হয়ে পাঠক কোন টানে যেন পৌঁছে যায় তান্ত্রিক সাধনার অজানা কালের বিহারগুলোতে, একই সাথে পাঠককে নিয়ে যায় সেথায়, যেথায় চিরকালের বাঙালির আত্মিক মুক্তির অন্বেষণ চলে বর্তমানের আখড়া বাড়িতে। পৌর মানচিত্র কবিতায় প্রভাসিত হয় স্বদেশ ও সমকালীন জীবনচিত্রের আবেগ মথিত প্রত্যয় এবং দ্ব›দ্বময় অস্তিত্বে ফেরার আকুতি; যা এক মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয় গ্রাম ও নগরের দূরত্ব। এই দ্বন্দ্ব কবিকে নির্জনতার একাকীত্বে লীন করে বিচ্ছিন্ন জীবনের দিকে না ঠেলে জীবন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। যথা:

‘হাঁটতে চেয়েছিলাম হাটুরের সাথে/
মালপত্র নিয়ে আমি কুপির আলোয়/
ছানিপড়া চোখে স্থির পথের ধুলোয়/
পৌর মানচিত্র দেখি কড়া-পড়া হাতে।’ (পৌর মানচিত্র)

অভিসারের অপেক্ষা কবিতায় জীবনের অতীত স্মৃতির অচলায়তনে কবিকে বার বার নিয়ে যায় অভিসার তথা পুনর্মিলনের আরাধ্য প্রান্তরে, যেখানে তার মাটির কাছে প্রত্যাবর্তনের চিরকালীন আকুতি বাংলার নদী-জল-হাওয়ার সাথে একাকার করে দেয়। রোম্যান্টিক মিলনের কামগন্ধ মাখা নদী যেন আজন্মের অন্তরে লালিত প্রেয়সীর মতো কাছে টানে। যেন নদী-জল-ঘাস এর সুবিস্তীর্ন প্রান্তর জুড়ে পড়ে থাকা বালুতটে ফিরে আসে কবি এবং আশৈশব লালিত পদ্মার স্মৃতিময় দিনগুলি ধরা দেয়। যথা:

‘পদ্মা হয়ে ওঠে যেন রজস্বলা নারী/
ঋতুমতী মোহিনী সে কামুক শরীরে/
আমিও প্রেমিক বটে নাগর তারই/
অভিসারের অপেক্ষা স্রোতস্বিনী তীরে।’ (অভিসারের অপেক্ষা)

কালের বিচারে, বিষয় নির্বাচনে, ভাবের দ্যোতনায় এবং সৃষ্টির দিক থেকে শূন্য দশকের কবিদের কবিতা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। কাব্য বোদ্ধারা বলে থাকেন, যে কবির মন দেশাশ্রিত, তিনিই হলেন মহৎ কবি। আমরাও অনুপম হীরা ম-লের কবিতার দর্পণে প্রতিফলিত জীবন খুঁজে পাই। ব্রাত্য সঙ্গীত কবিতায় যখন অনাড়ম্বর ভাষায় উচ্চারিত হয়:

‘পুণ্য মতি    দ্বিজ অতি,/
আমি বলি তারে।/
ব্রাত্য আমি    অন্তর্যামী/
ধন্যি বারে বারে।’ (ব্রাত্য সঙ্গীত)

একজন প্রকৃত শিল্পীর সক্ষমতায় দেশজ ঐতিহ্যকে শিল্পে রূপায়িত হতে দেখি প্রেমিকের পদধ্বনি কবিতায়; যেখানে প্রেমিকের বয়ানে উচ্চারিত হয় ধুয়া গান, আসন্ন উর্বরা ঋতুমতী ফসলের জমি, স্রোতস্বিনীর কলস্বরের মতো মায়াবী প্রেয়সীর মুখ প্রসঙ্গ। বাংলার অতীত ঐতিহ্য কবির চেতনাকে বর্তমানের জীবন  স্রোতে টেনে এনেছে, যেখানে ক্রান্তিকালের প্রাগৈতিহাসিক বাঙালির আদিম অস্তিত্বের সূত্রে একীভূত হয় বর্তমানের জীবনধারা। কবিতার ভাষায়:

গঙ্গা কিংবা গঙ্গারিড্ডি যেখানে ছিল/
পিতার বসতি, সেখানে ফিরেছি আমি।/
প্রশান্ত বাতাসেরা এসে বিশ্রাম দিলো/
দেবতার চামর যেন তালুতে নামি।’ (প্রেমিকের পদধ্বনি)

হাজার বছরের ইতিহাসের ছায়াপথে হেঁটে যে জনগোষ্ঠী বসতি গড়ে তুলেছে এই বাংলায়, তার পশ্চাতে রয়েছে জীবন সংগ্রামের এক সুবিস্তৃত পটভূমি। জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষ যে নিঃসীম অন্ধকারে পথহেঁটে দুই চোখে স্বপ্ন মেখে বিবর্ণ দিনগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলে তার প্রতিচ্ছায়া বর্তমান কাব্যগ্রন্থের কবিতাবলীর নাম শিরোনামে স্পষ্ট। কবিতা শিরোনাম এবং বিষয়ের মাঝে কবির কৈশোর এবং যৌবনের ঘাত-প্রতিঘাত ও চিন্তাধারাকেই আন্দোলিত হতে দেখি।

আমরা যে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি বর্তমান কাব্যগ্রন্থে খুঁজে পাই তা হলো অতিন্দ্রীয়বাদের সাথে ধর্মের যে সম্পর্ক সেখানে অন্তর্বিরোধহীন অদ্বৈতবোধই কবির প্রধান অবলম্বন। বর্তমান জীবনধারায় অতীন্দ্রিয় চেতনার বিকাশের পটভূমিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম ধর্মের যে ঐতিহ্যগত দার্শনিক পরিভাষা তার সাথে একীভূত হয় শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, সুফি, বাউল, মতুয়া প্রভৃতি ধারা যা কবির অতীত চেতনালোকের পাশাপাশি আধুনিক জীবনবোধেরও পরিপূরক। অনুপম হীরা ম-লের কবিতার চিত্রকল্প এবং প্রতীক নির্মাণের মাঝে আছে এক ধরনের অতীতচারিতা যা একই সাথে প্রগতিবাদী এবং দুঃখবাদের ধোঁয়াটে কুয়াশায় নিমজ্জিত যান্ত্রিক অভিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। বর্তমান কাব্যগ্রন্থে নতুন যুগের সামগ্রিক চিন্তাধারার নতুন বিন্যাসে পাওয়া আধুনিক বাচনভঙ্গি, উপমা, অলঙ্কার ও বিশেষণ যা লোকজ অনুষঙ্গকে কেবল ধারণই করে না বর্তমান জীবনবোধকেও জাগ্রত করে।


কাব্যগ্রন্থের নাম: প্রেমিক ও পলাতকা। কবি: অনুপম হীরা ম-ল। প্রকাশক: বঙ্গভাষা, ঢাকা। প্রচ্ছদ: সুভাষ চন্দ্র সূতার। প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০১৫। পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬৪। মূল্য: ১০০.০০ টাকা।